চন্দন ভট্টাচার্যের তিনখানি কবিতা











চন্দন ভট্টাচার্য




সংকীর্তন

যেভাবে বুকের মধ্যে বরবউ নামিয়ে খালি রিকশা 
ফিরে যায় 
যেভাবে সাদা সন্দেশ হয়ে অনুরোধের রোদ ফুটে আছে 
যেখানে বেড়াল বাচ্চা-পাড়ার জায়গা খুঁজছিল --- 
মাথায় গুলাম আলি খান 

সকালবেলার সুর চন্দনসমান 

প্রতিদিন দশ মিনিট আকাশের ক্লাস 
খবরদার কেউ যদি সূর্য দেখে চোখের পলক ফেলেছিস! 
না হলে কী করে হবে পায়েসগাছ রান্নাঘরের পেছনে?
যেদিন বাজারের পয়সা থাকে না, তিনটে পায়েসপাতা 
কড়াইতে ফেললেই ঘিভাত, মাংস, পাঁপড়, মিষ্টি পান... 

সকালবেলার স্বপ্ন চন্দনসমান

দুটো ইঁটে চারভাঁজ বস্তা পাতা 
জাজমেন্ট সিট 
দু’পায়ের পাতার মধ্যে কালোবজ্র 
হাতুড়ি পড়ছে 
ঘুরে-ফিরে যতবার দ্যাখো, 
খোয়াভাঙা মিস্তিরি 
একটু করে উঠে যাচ্ছে নিজস্ব
টিলায় আলিশান 

সকালবেলার ঘাম চন্দনসমান 

আজ আবার বেহুঁশ জ্বর আপনার 
বন্ধুর 
সারা গা ঝাঁঝরা, কোথা থেকে রক্ত 
টানে বলুন তো! 
মুখে কিছু দিলে বমি, শুয়ে আছে, 
শুয়েই --- যেন বিছানা নক্ষত্রযান 

সমস্ত, যে কোনও যাওয়া...



সান্ধ্য বুলেটিন

মন পরাস্ত আছে। আজি সন্ধ্যায় সমরসংবাদ এই উড়ন্ত মৃত
দুই কবুতর, আমিষবর্ণ। স্নানকালে শিরস্ত্রাণ খুলিবার ভুল
একবারই করিয়াছিলাম। তারপর হইতে শুধু
শিরস্ত্রাণ রহিয়াছে।
তবু কিছু স্বপ্ন মাখা এই লৌহজালিকায়। ফর্ম্যালিনে ভেজানো 
শতাব্দীটি খুঁড়িয়া দেখিলে মেঘের বুককেসে বৃষ্টিমোহর,
বাগানটি সবুজ অশ্বমেধ, আলো সুবর্ণরেখা।
শুধু এক আলোকবর্ষ জীবনের পরে ভাষা বলিয়া কিছু নাই
বলিবার কথা শিশুর নুংকুর মতো
সে দেখে দশমীপূজার আবিরবর্ণ ঢেউ উঠিল নদীতে
খোলাচুল, উৎসুক স্তন ...


গোঙানি কি শুধু অয়দিপাউসের?




চাঁদ সদাগর

ক।
এত সকালে কোথায় ঢাক বাজছে, মা?
কাত্তিক দাসের বাড়ি মনসাপুজো না!

খ।
কালো বাড়ির একমাত্র ফরসা শিশু উঠোনে শোয়ানো
ল্যাংটা, পেট ফুলে আছে। তাকে ঘিরে অনেকটা জলকাদা ...
ভেতরে পেচ্ছাপ খুঁজে পাবে। ঠোঁট নীল, বাঁহাতের কনুইয়ের
ওপরটা বসা মতো। পুরো বারো ঘণ্টা বাঁধন ছিল।
রক্তাম্বর পরা জটাধারীকে
কাঁদতে কাঁদতে প্রণাম করছে বাচ্চার কাকিমা

গ।
চিৎকার দিতে দিতে গলা ভেঙে গেল কাত্তিক দাসের
ধুপ ধুপ করে এক একটা মূর্তি মন্দির থেকে
বাইরে এসে পড়ে আর সাপের পাঁচটা ফণা গুঁড়ো হয়ে
কাঠি বেরিয়ে যায়। সিঁদুরের কৌটো দুভাগ হয়ে কাদামাটি লাল।
ওর বড়ছেলে শংকরদা, যাকে ওঝা রাজাবাজারে
নিয়ে গিয়ে খুব পিটিয়ে চারশো টাকা কেড়ে নিয়েছে
আমার বুকে ধাক্কা মারল,
‘এখানে কী দেখতেছিস?
মাকে বললে আবার স্নান করাবে

ঘ।
বছর ঘুরতেই হাতে নৈবেদ্যের থালা - মা তুমি কোথায় ছোটো?

কাত্তিক দাসের বাড়ি মনসাপুজো তো।

1 comment:

  1. অসাধারনতম! আমার কুর্নিশ জানবেন চন্দনদা।

    ReplyDelete

Powered by Blogger.