মণিদীপা বিশ্বাস কীর্তনিয়া



ব্রথেল

উলু দিলো পোয়াতি মেয়েরা
আর ওল্টানো কলসের জল ভেঙে গেল
থকথকে বাতাসের ভেতর উঁকি দিল চাঁদ
এ পাড়ায় জানলা নেই
হাওয়া ভালবাসে বলে লাল সায়াপরা মেয়েরা
বেলুন হাতে সার বেঁধে দাঁড়ায়
লম্বা সবুজ নখে বেলুন টেপে
আর খলবল করে বাতাসের হাতপা
বাতাসের দেওয়ালে নিরক্ষর আপেল টাঙায়
আধখাওয়া আপেলের পাশে চিৎ হয়ে শোয়
কথা বলে না,রবারের সাপ পেঁচিয়ে ধরে জিভ
শুধু উলু দিয়ে ওঠে আর গর্ভপাত হয়
হাওয়ার ঝাঁকিতে খসে যায় মাংসের দলা
ভোরের আঁশগন্ধ জলে ভেসে ওঠে প্রিয় লাল বেলুন
শিশুদের মতো হাঁ করে ঘুমোয় তখন সব
নষ্ট মানুষরা গলি পেরোতে পেরোতে দ‍্যাখে
হলুদ পাতায় ভর করে নেমে আসছে হাওয়া
ব‍্যথা নেই যেন কোনও
ঘুরে ঘুরে শুধু লিখে রাখছে এই গ্ৰহ
প্রাচীন হাওয়াদের যাবৎজীবন..
                        

 

 

শিকার

আমাদের পুরুষ‍রা শিকারি
জীয়ন্তে মরা লতা আমরা
সুরেলা গন্ধের নেশায়
ছিঁড়ে এনে দুজনকে,ভুলে গেছে ওরা
জোছনার ভল্ল বিঁধিয়ে দিতে আমরাও পারি
জানেনা উদ্ভিদ, তবু মাংসাশী
জঙ্গল থেকে খুঁড়ে পাশাপাশি পুঁতলো যেদিন
বুঝলাম মাংস ভালবাসি
মাঝে মাঝে তাই
এ ওর গা শুঁকে সুরের গন্ধ পাই
চিকন মাছের রোদ সহ‍্য হয়না চোখে
হাওয়ার আড়াল থেকে থেকে
ভালো লাগে নিয়মের অসহ্য ভুল
লবঙ্গ ফুল!লবঙ্গ ফুল!
পশমের সুঁচে মাছমুখে বেড়াল বল কতোবার এলো
দুপুরের কাঁটা চুষে জিভও এতো খর হোলো
আমাদের নিজস্ব চাঁদের ধারে
অন্ধকারের দলা হয়ে বসি এইবারে
দুহাতের নখ ঘসে শান দিই আঁশবটি
ঝোলের বাসটে গন্ধে গাদা আর পেটি
ধারালো থাবায় যে যার
দেখে নিস ছিঁড়ে নিতে পারবো এবার
ভিতু আর নরম যত নীল ব‍্যথা
গোপন রেখেছি তোর আর আমার
লবঙ্গ ফুল!চাঁদ উঠলে আবার
আমাদের পুরুষরা শিকারে বেরোলে
শাদা আঁশে ভরে যাবো যুগল আঁধার
 

 

 

ইচ্ছে

কি হয় তারপর?
তুই ঈশিতা রায় আর আমি অরিণ বন্দ‍্যো
দুজনে একসাথে থাকবো বলে
পাশাপাশি দুটো মোম জ্বলতে শুরু করে
কাঁপাকাঁপা দেওয়াল ও আসবাবে
ধারণা বানায় ছায়ার
ছায়ার ভেতরে আপেল গাছ,হাওয়া,শিসভর্তি রাত
রাতের টেবিলে খেতে বসে যখন
হাওয়া বাজে পাতায় পাতায়
ঝোলে ডোবা মাংসের আত্মা নিয়ে গল্প করে তারা
আঙুল দিয়ে ছবি আঁকে শাদা প্লেটে
ঘন সুপের মতো তাজা ও ঘরোয়া দুজন
সমর্পণের প্রতিটি ফোঁটাই সোনালী ও সুস্বাদু
বেসিনে হাত পাতলে শুধু ধুয়ে যায়
রঙ ..তুলি ..আঙুল..
শুধু
  রাত্তির কি কি বলে?
ইচ্ছেরা পাগল হলে?
পুড়ে যাওয়ার ভয়ে নভেম্বরের আপেল বাগান
শিউরে উঠে জমে যায় শাদা বরফে
মোমদুটি জ্বলে শুধু
দুরকম ইচ্ছে নিয়ে তারা জ্বলে থাকে
ধারণার বাইরে ও ভেতরে।
  

 

 

লেসবস দ্বীপ

পাথরের কফিন ভেঙে দিলো ব্ল‍্যাঙ্কফায়ার
ডালা খুলে তাকালাম যেই
দৃষ্টিতে আগুন ধরে গেল
আর এখন চোখের ছাই থেকে বৃষ্টি নেমেছে ফের
জমাজলে দেখি ভেসে পড়েছে তরুণ কবিদের লেখা
নাচগান সমেত গোপন কথার ভায়োলেটগুচ্ছ
খেয়াল করো,কম্পাস কিন্তু ঘুরে যাচ্ছে ধ্রুব দিকেই
সংকেত ও ইশারায় আজ
তীক্ষ্ণ ও অভিমুখী দূরের জাহাজ
কাছিমের পিঠে উঁচু হচ্ছে লেসবস দ্বীপ
মেয়েলি ছাঁদের ঠোঁটে গরম চাঁদের চুমু
সাঁতারের এই
  অসম্ভব জল
কি হবে আফ্রেদিতি?ঈশ্বরের ফুল
মেয়েদের সমবেত গানে যতবার ডেকেছি
ভেঙে যাওয়া বিশ্বাসে নীল হোল চিহ্নের বাগান
ওরা কি ভুল ছিল তবে?নিতান্ত স্বভাবের ভুল?
যেখানে মাটি ফুঁড়ে ফেরত এসেছে ঢেঙা গাছ
সূর্যাস্ত হাতে সব বীজ উঠে এলে
কি করবো বলো প্রাচীন গান পেরিয়ে
কবি যদি দাঁড়ায় একা জ্বলন্ত খোলাচুল নিয়ে?
যখন পাথরে নিঃশ্বাস ফেলছে তার ভাঙা অক্ষর
অক্ষর হ‍্যা..সে তো জানে ছেঁড়া প‍্যাপিরাস আর দূর
চোখের কোমল জুড়ে লিখে রাখে সাফোর কবিতা
করোটি পুড়িয়ে দিলেও নতুন পাথরে
ফুটে ওঠে পুরোনো সে সুর
ভাঙা চবুতরায় বিপজ্জনক ঝোলে ঝোড়ো নিঃশ্বাস
আগুনকে ঘিরে বাজে তারযন্ত্র
পাথরের কফিনে ঢাকা পুড়ে যাওয়া মন
ভালবাসার নিপুণ আত্মা শুধু জানে
ছাইয়ের ভেতর জাগে লেসবস দ্বীপ
জেগে থাকে মানুষের ভুল ও ভুবন..

 

 

লিলিথ ডানা

তোমার নিচে শোবো না আর ঘুম
আদর কি খুব খেলনা ভাঙার মতো?
হাওয়ায় আমি বিছিয়ে রাখি মন
জলের দীঘল শরীর হবো না
যেসব জলে হলুদ পাতার ঢেউ
পাতার থালে অন্ন লেগে আছে
দুএক দানা ভাতের মতো চুমু
বাঁকানো ঠোঁট শরীর খুঁটে তোলে
পাখির নখ ছিটিয়ে আছে ধুলোয়
মাংস ছিঁড়ে রক্ত পড়ার ব‍্যথা
খুলি আঁকা পতাকা জোর হাওয়ায়
রক্তে রোজই জাহাজডুবি হয়
আপেল গাছ জড়িয়ে প্রাচীন সাপ
মৃত নাবিক আগুন জ্বালে ডেকে
বিষন্ন দ্বীপ একাই জেগে থাকে
শরীরে তার রাত্রি পোড়া ছাই
ভালবাসার অসুখী আত্মা
একলা কেবল বোকার মতো বলে
তোমার নিচে শোবো না আর ঘুম
সঙ্গহীনা লিলিথ ডানায় উড়ি
তোমায় তবু আমিই দিতে পারি
স্পর্শ আতুর খিদেয় ভরা ওম…                                         

 

 

জোনাক পোকা মাথার ভেতর

দুএক ফালি চাঁদের আশায়
সাপলুডোময় রেলের লাইন
নড়বড়ে তার ইচ্ছে সাজায়
মধ্যরাতের মফস্বলে
ঠান্ডা নিথর লোহার পাটি
সবুজ পোকার আলো টাঙায়
চোখের বাড়ি যৌনতাহীন
নেশায় তবু নাচ শুরু হয়
আশিরনখ চাঁদের তলায়
খয়েরি তরল রাতের গ্লাসে
বরফকুচি তারার মতো
সবুজ আলোর পোকা ভাসে
আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষ
নিজের কাটা শরীর জোড়ে
খুলির ভেতর তখনও তার
জোনাকি ঝাঁক,ভাতের হোটেল
বন্ধ দোকান,লেডিস সেলুন
ঘুমন্ত এই ভিড়ের চক্ষু
তাকিয়ে থাকে অনন্তকাল
হাঁ করলেই বারেবারে
সবুজ আভার জোনাকপোকা
দ‍্যাখায় মাতাল ছিন্ন আলোয়
বোকা প্রথম প্রেমিক যেমন
একলা জ্বলে অন্ধকারে 

                                                          

 

                                                     ছবি - অর্ণব বসু

No comments

Powered by Blogger.