পৌষালি চক্রবর্তী

 

 

রাস

১.

অমলতাসের বনে তখন শুধুই রাধাভাব

প্রণয়ীর তীব্র নখের মত থোকা থোকা ফুটে থাকা ফুল

অপলক চেয়ে আছে বিধবা পার্বতী বোষ্টমী




উপবাসী দুপুরে জল পায়নি বলে সন্ধের ফুলে মালা গাঁথা

 

চাঁদের আলো জ্বালিয়ে একটু পরেই পথে নামবে সে

 হাতে সেই সধবাবেলার টিনের তোরঙ্গ

আগে থাকত নূপুর,কঙ্কন,জরিবুটি  শাড়ি

এখন জ্যোৎস্না জমায়

রাসপূর্ণিমায় অঙ্গরাগ করবে

 

এই তার আর্তনাদ...

 

উপাসনার চেয়ে খাঁটি 

 

২.

ততক্ষণে যমুনাতীরের চিত্রবতী মেঘ

ঢেকে ফেলল রাসপূর্ণিমার চাঁদ

তাজমহলের কাছে বাঁশি বিক্রি করে যে আয়াত,

যে অধর ছুঁয়েছে ও মোহন মুরলী

তার কোন পাপ লাগেনা,

নেই তার পূণ্যেরও ভয় ;

 

সে তোমাকে 'মা' বলে

 

আত্মহত্যাপ্রবণ হওয়ার আগে

বৈঠা তোল ওগো বৃন্দাবনী সারেঙ

বাতাসে বাতাস জুড়ে তাকে গিয়ে বল

আমি তার একমেব

জলজ আকাঙ্ক্ষা; উদ্ধারণপুর...

 

 

 

 

কবি

নৈর্ঋতে সুরম্য মেঘ, ঈশাণের কোল ঘেঁষে তারা

দেখেছিল যক্ষ এক

তারপর থেকে এই

বনতলী , পাহাড়ে পাহাড়ে

তার ঘুরে মরা সারা

 

'এ আর এমন কী কথা? বিনিয়ে বিনিয়ে ভ্যানতারা।'

 

এই বলে সমালোচক থামলেন আর বাক্যের আঙিনায় আপনি

পড়লেন মুখ থুবড়ে ।

 

যক্ষপ্রিয়ার দিকে মেঘ ওড়াবার দিনে কালিদাসেরও এমন হয়েছিল ;

মাঘ, ভারবি বা থেরীগাথার কবিদেরও

 

তারপর কেটে গেছে কত যুগ

 

অ্যান্ডোমিড্রার আয়ুক্ষয় ,

বহতা হাওয়ার সাথে কালচক্রে মিলিয়েছে কত জনপদ; আর সভ্যতা আরও উদ্যত হয়েছে নিজেকে গ্রাস করতে

 

আর আপনি? কবিযশপ্রার্থী আপনি?

রাজানুকূল্যের বদলে ঝুঁকেছেন সরকারী চাকরি আর দিনান্তে মদে

তবু এক রয়ে গেছে  প্রথম আষাঢ়,

মাতাল কবির দল তার শতজলে

পেতেছে হৃদয়,

 

তাকেই লিখুন আপনি

রঙ্গিনী দেবতা আপনার... বাক সরস্বতী 

 

 

 

 

আবহমান

তোমার আদিগন্ত গ্রস্ত উপত্যকায় আসি

আদিম কৃষকপুরুষ ...

 

নীবার ধান

পক্ক গোধূম

স্বর্ণ রৌপ্য শস্যাদি

ভাবীকাল অনাঘ্রাত

 

নদীতীর

খেলামাটি কিশোরী

ঢলঢলে যুবতী শরীর...

 

পাহাড়ে পাহাড়ে আলোবদল

 কেয়াখয়ের ঠোঁট

সুজাতার গভীর নাভী...

 

লোলচর্ম  কুশীবন,চিতাকাঠ

আবার

রামপ্রসাদী বালিকার ভেংচি

 

মহামার গর্জনে নারীকে খুঁজি

আদ্যা বলল,

 

নিজেকে জানো... 

 

 

 

জনপদাবলি

 চকদিগনগরের দিকে

        বাঁক নিল

                লালনসাঁই বাস

 

বাউল মানুষের দেশগাঁ,

         ধূলিমাটি

                ছুঁয়ে ছুঁয়ে

                     এগিয়েছে

                                 চাকা

তার বুকে ধরা আছে

না বাঁধা কবিতা...

 

 বরনডালার ওমে

      জারিত বধূ

           পালিত মুরগী খাঁচা,

                নোটেশাক ঝুড়ি

                    টাটকা ফুলের বোঝা

পালানো কিশোরী...

 

স্টিয়ারিঙ ঘুরে যায়

 

স্থির এক ঠাকুরের ছবি

লালনসাঁইয়ের সাথে

 

ফুটে ওঠে জনপদাবলি

 

 

 

 

তোমাকে

অনন্ত পেরিয়ে

আর এক অনন্তে যাওয়ার মাঝে

আমাদের দেখা হল

 

তোমার অর্ধেক মুখ এখন তুন্দ্রা অঞ্চল

বাকি অর্ধ চিরহরিৎ;

আমিও  কতকাল কনকচূড় ধান দিই নি নিজস্ব ময়ূরে

 

বাকি কথা দুজনেই জানি...

আমরা এখন থাকি নদীহীন উপত্যকায়,

পাড় ভাঙা শব্দ তবু কোথা থেকে আসে?

ভালোবাসি উচ্চারণে আদিগন্ত কেঁপে ওঠে মাটি?

 

সূর্যেরও আয়ুক্ষয়

অমোঘ নিয়তি মেনে

জল, হাওয়া, প্রাণবায়ু মঙ্গল আঁকি

 

এক দিন, অন্তত একবার

এলোমেলো বাঁচি

 

 

                                                                                               ছবি - অর্ণব বসু

 

No comments

Powered by Blogger.