অবিন রায়চৌধুরী


সবুজ সিম্ফনি

আমার ঠোঁটের পাতায় মিশে আছে একটা গ্রামীণ শ্যাওলা সেতু, আমার বুকের মাঝটায় কাশফুলের নরম আলো।চোখের ভেতর রয়েছে গাছেদের আঁকাবাঁকা খেলাঘর..আমার পায়ের তলায় মিশে আছে  ধুলোর মায়াবী ঐশ্বর্য;তোমার সাথে আমি যখন প্রতি রাতে মিলিত হই তখন এ সমস্ত কিছু তোমার ভেতর ঘরে ছড়িয়ে দিই,বেড়ে বেড়ে দিই...তোমার শরীরের ভেতর মিশিয়ে দিই অলৌকিক,সবুজ এক সিম্ফনি...ওই দেশেই বেড়ে উঠছে আমাদের ভারতবর্ষ...  



বিষণ্ন শিলালিপি-

আমি এতদিন যা কবিতা লিখেছি তার সবকটিই প্রকৃতি লিখে রেখেছিল তার আদিম কোনো গুহায়। আমি তার সেই লেখা জোর করে ছিঁড়ে এনে আমার নামে চালিয়ে দিই...আমার সব কবিতাই প্রকৃতির শরীর থেকে ছিনিয়ে আনা এক একটি বিষণ্ন শিলালিপি।  


  
হারিয়ে যাওয়া বন্ধু

শহরে ভীষণ মেঘ করলে আর তার মাঝে হলুদ হ্যালোজেন জ্বলে উঠলে আমার হারিয়ে যাওয়া সেই বন্ধুর কথা মনে পড়ে। লাজুক,ভাঙা শিশিরের মতো সে বন্ধু আমার...চুপি চুপি মায়াবী প্রান্তর জুড়ে সে গান কুড়োত সারারাত,আমার সেই হারিয়ে যাওয়া বন্ধু চাঁদকে 'দেবী' বলে জানতো।হঠাৎই সে হারিয়ে গেল,ঝুঁকে থাকা ঘুম ফেলে আজও তার পিছু পিছু ছুটে চলি আমি...ছুটতে ছুটতে আমিও হারিয়ে যাই আমার হারিয়ে যাওয়া ওই বন্ধুটির মতোই,একদিন হঠাৎ প্যাচপেচে গরমে আমাদের শহরের শরীরে অজানা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ি গভীর রাতে... 


   
নেমেসিস

চ্যাটচেটে কালো রক্তের ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছি...
জানালার পাশের গাছটিতে গলায় সুতো দিয়ে আত্মহত্যা করেছে রঙিন ঘুড়িটি...
ছাদে পায়চারি করছে নিভৃত দুটো সাদা শরীর..
তাদের ঠোঁটে জ্বলছে লাল শূন্যতা,ওদের গায়ে লেগে আছে ভাঙা দেশের মাটি....
দেখি -শহরের রাস্তায় দুপুর দুটোতে কিছু ফ্যাকাসে ভূত ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক ওদিক...
চারদিকে নীল স্তব্ধতার মাঝে মৃত্যু দুলছে শুধু... 


   
মিলন


একতারা অনেকটা লাজুক,মেঘলা মেয়ের মতো দেখতে।একটি তারেই সে বেঁধে রাখে তার জীবনের যাবতীয় বিরহ,আগুন।একতারা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বালিশ চাপা দিয়ে নিঃশব্দ এক কান্না..আর গিটারের পাঁচ পাঁচটি তার,গিটার অনেকটা একটা স্মার্ট ছেলের মতো।গিটার উড়ন্ত উল্লাস।ওদের মাঝে জেগে আছে এক পৃথিবী ব্যবধান।তবু তারা দুজন দুজনকে ভালোবেসে সংসার পাতে,মায়াবী গন্ধে কেঁপে কেঁপে ওঠে ওদের শরীর।দু'জনে এক পথে হাঁটে নি বলেই ওরা আজও এক পথেই হাঁটে...







No comments

Powered by Blogger.