অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়

  


চারপংক্তির পাসওয়ার্ড

১।
যতটা লেখার ছিল, একবর্ণ বলতে পারিনি
যতটা বলার ছিল, একবর্ণ ফোটেনি লেখায়
না-বলা-না-বর্ণ পরস্পরের প্রতি চুপচাপ তাকায়...
শূন্যতার ভাষা দিয়ে আত্মজীবনী লেখা যায়!

২।
এক চোখে চেয়ে আছে মোবাইল টাওয়ারের টং
প্রবীন মফঃস্ফল ক্লীন-শেভড্ তুখোড় যুবক
সন্ধ্যেয় লোক আর জড়ো হয় না রকে বা দাওয়ায়...
টেলিফোন বুথ খোলা--যেন স্মৃতিবিলাসের শখ

৩।
উপরে চক্কর কাটছে চাকচাক চতুর চিলেরা...
তলায় পবিত্র মাটি--অনাবিল, অঢেল, উর্বর... 
এইখানে কোনওদিন ভাগচাষিদের ভাগ ছিল...
বদলেছে মালিকানা--আস্তে আস্তে বুজে আসবে সব...

৪।
বাঁ-চোখে কক্ষপথ, ডান-চোখে ঢুকেছে ব্ল্যাকহোল...
সাঁই সাঁই উপগ্রহ... খসে যাচ্ছে উল্কা, ঝুরো তারা...
আর কোনও রন্ধ্র নেই...চাপ চাপ অন্ধ...অন্ধভার...
অনন্ত মহাকাশ স্নায়ুতে স্নায়ুতে দিচ্ছে সাড়া

৫।
আমাদের জুটি আর কি অনেকটাই সুচিত্রা-উত্তম
লোকচক্ষে মখমল...আড়ে আড়ে ঈর্ষা, অবিশ্বাস...
ওথেলো নাটকের তত্ত্ব আজও কত জ্যান্ত, প্রাসঙ্গিক!
ঘৃণা-প্রেম বোধ হয়ে প্রত্যেকের ভিতরে ফেলেছে শ্বাস

৬।
এসব পঙতির নেই পিঠে কোনও আশ্বাসের হাত
ব্যর্থতার জ্বালায় নেই একরত্তি শুশ্রুষার বল...
এইসব পঙতি বড় লোভী, উচ্চাকাঙ্খী, আত্মপর
এইসব পঙতি জানে বুরবক বানানোর ছল

৭।
টিটকিরি, ঘাড়ধাক্কা, দোরবন্ধ--তারপরও এসেছে!
আত্মসন্মান-লজ্জা-ঘেন্না বলে কিছুই কি নেই?
না এসে পারে না আসে, না ভেসে পারে না তাই ভাসে,
ফিরে আর যায়নিতো...আসছে...ক্রমশ আসছেই...

৮।
আমার গহীনে স্তব্ধ পাথরের প্রাসাদ, পরিখা...
নির্জনতা থম হয়ে ধরে আছে কেল্লা মহল...
যে-কোনও মুহূর্তে আক্রমণ এসে পড়তে পারে হঠাৎ--
হাত ডুবিয়ে তুলে আনি অস্ত্রশস্ত্র, ঘোড়া, সৈন্যদল...

৯।
মাথাগরমের দ্বীপে কে যে এনে বসিয়ে দিয়েছে!
দুপাশের রগে ঢেউ... ফুলে ফুলে উঠছে কড়া ক্রোধ...
রোদ্দুরে পুড়ে গেছে নীচ থেকে ওপরের বালি...
প্রতিরোধ বাষ্পীভূত... টগবগ করছে প্রতিশোধ...

১০।
স্বপ্নে দেখা জায়গায় হঠাৎ যেমন এলে হয়
তেমন তোমার বাড়ি দৃশ্যতঃ মোড়া কুয়াশায়
এখানে একাই থাকো? খুব ফাঁকা শব্দ-সাড়ারা...
ঢুকে দেখি--তুমি নেই, চোরাপথ নেমেছে তলায়






No comments

Powered by Blogger.