রাজীব চক্রবর্তী


ভাষা- রক্ত ও মাসিক যন্ত্রণা

জ্যান্ত সাপের মতো 
এইগলি চলে গেছে নদীর 
                              যোনিতে l
রাস্তার শরীরে হাত দিলে 
বোঝা যায় চাপ চাপ রক্ত 
                          লেগে আছে ---
মাসিকের নদী শব্দহীন- বর্ণহীন 
                অবিরাম রক্তক্ষয়ী..... 
শুধু রাস্তার বাঁপাশে স্যানিটারি 
                      প্যাড পড়ে আছে l






পঞ্চতত্ত্ব ও প্রেমমুদ্রা

তোমার চুমুর মতো 
ভাষাজ্ঞান কারই বা রয়েছে !

এতো এতো তাবিজ কবজ ছিঁড়ে 
এইসব বসন্ত বিকেলে 
কারা যেন 
গল্ফগ্রীনে ফিরে যায় 
মাংসের লোভে l
তোমার চোখের নীচে 
পড়ে থাকা আলো, 
বকুলের ধ্বজা, 
সুশীতল ঝিল থেকে 
উড়ে আসা জলজ প্রত্যয়, 
এইসবই ভেসেছিল, 
       নির্মম শান্ত দুপুরে l

তোমার শরীর থেকে উড়ে আসে 
কেকা ধ্বনি, 
উড়ে আসে ব্রণময় নিষিদ্ধ চুম্বন l
বিকেলে ভোরের আলো ফুটবে না জানি

এইসব ইতিহাস সাক্ষ্য রেখে 
দেউলিয়া হয়ে যাই রোজ এই 
জুয়ার আসরে ক্রমাগত 
উলঙ্গ আকাশের নিচে... 





জাগরণী

সকলেই কবি নয়

পরান্মুখ চ্যুতিগুলো 
অতিক্রম করে 
তিনিই অমর হয়ে যান 
      যিনি হওয়ার ভিতরে এঁকেদেন 
অতলস্পর্শী সমুদ্র, 
......নীলাম্বর আকাশ --আর ডুবে যান 
হরিণ হৃদয়ে l
যিনি বাসিমুখে 
               চুমু খান ঘুমন্ত স্ত্রীর 
                                 জাগ্রত নাভিতে....
বৃষ্টির শরীরে যিনি কথকতা 
          লিখে দেন হাসতে হাসতে --

পাথরে পাথর ঘষে 
আগুন লাগান, 
                    অক্ষর ঝলসে ওঠে 
                                  এই অবেলায়... 







হোলিকা দহন 


শুকনো ডাল 
পদাতিক ডাবপাতার 
খসখসে ঝালর 
মেটে আলু 
এক্ষুণি জ্বলে উঠবে 
সোমত্থ চিতার মতো, 
জ্বলে উঠবে খড়ের কাঠামো ছেনে 
হোলিকার কালিন্দী শরীর..... 

নদীর ওপারে 
রাত 11.45, 
উত্তাল বর্ষণে ভেজে 
             অস্ট্রিক রমণী.... 
             ঘাম জমে কালের কপালে 
মাঠ ভেসে যায় পূর্ণিমা জোয়ারে, 
দোল মানেই নারী.... বসন্ত.... আগুন 
                        জ্বলে পুড়ে মরে চাঁদ একা 








মার্জিন এখনও টানা বাকি 

বন্ধু বলতে তো 
সামান্য বালিয়াড়ি, 
বুকখোলা অন্ধকার রাত 
হাতের ডানার মতো
 নির্মম তৃষ্ণা...... 
আর ওই 
নাবালক স্মৃতিগুচ্ছ 
টুকরো পাথর আর 
মিল্কিওয়ের নামে ছেঁড়াখোঁড়া 
                        কবিতা বাসর..... 
কয়েকটা ঢিল ছুঁড়েদিয়েছি 
আজীবন....... টলটলে জলে 
                        ঢেউগুলো 
                         ফিরে আসে 
                           আততায়ী হয়ে..... 








বিদেশী নামের প্রেমিকাকে 


তোমার আলোর কাছে হাঁটু মুড়ে
বসে আছি --
কী যেন লিখেছি আজ ভোরবেলা থেকে 
স্কন্দকাটা........ মুখোশে 
                        মুখোশে ঢাকা 
                      শিং-- খুর-- তোতলা 
                                      শিশির জবানে l
তোমার স্তনের কাছে 
বসে আছি হা-অন্ন ভিখারির মতো l

আজকাল বিটি রোডে 
অন্ধকার নেই বড়ো আর ;
স্ট্রিটলাইট, দুইপাড়ে শপিংমলের কিছু 
                              
                    মৃদুঝংকার শোনাযায়, 
অব্যর্থ বকুল গাছের সাথে 
তোমার আমার কিছু 
        গভীর প্রেমের মতো ভেসে আছে 
                                 নরম চিৎকার l
তুমি তো খুলেছো ঝোড়ো চুলের 
সাঁজোয়া.......... এইমাত্র আঙুলের 
ফাঁক দিয়ে উড়ে গেলো 
"দুরূহ আকাশ " --- তুমি শুধু জানো 
                                       প্রিয়তমা l
এইসব অবুঝ 
মৃত্যুশোক  
শবযন্ত্রণা
ক্লান্ত সবুজ 
আমি লিখে দিয়ে যাবো 
তোমার হলুদ খাতায় --
                                      অন্ধদিন 
উৎকীর্ণ উপমাসমূহ যাবতীয় 
শোকের নির্যাস 
                          সাক্ষী হয়ে রয়ে যাবে 
                                পাতায় পাতায়..... 







বিদেশী নামের প্রেমিকাকে, ২



নীলাম্বরী !
মগ্নপ্রাসাদ ভেঙে 
চলে এসো হৃদয়ের কাছে 
হলুদ নদীর সাথে 
আরক্তিম পাহাড় দেখাবো l
ফিরে এসো 
             শান্ত 'মধুমূলে' ---
পাহাড় পাঠাবো নীলাম্বর l
ফিরে এসো 
নীলাম্বরী, 
মায়াবী হৃদয় উপবনে l








রাইঘাসে ঢাকা তরুণ জবানী 


সন্ধ্যানীড় আলো হাঁসের পাখার মতো 
হওয়া ঠেলে আমাদের প্রবাহিত জীবনের 
                        কড়ি-- মধ্যমা, উপেক্ষিত 
                      অন্ধকারে মুখ লুকিয়েছে l
যে নদীটি 
               এইমাত্র হাত ছেড়ে দিয়ে গেলো 
ইতিহাসসম্ভূত এগূঢ় শহরে 
হরিণ জানালা থেকে নিভু নিভু আলো 
উঁকি দিলে 
                 তুমিতো আমারই খোঁজে আসো প্রত্যহ, লুকিয়ে দেখেছি আমি !
পৃথিবী অনেক বেশি তোমার আমার সাথে 
কথাকলি নৃত্যের আঙ্গিকে
                 সময় কাটায়......আমরাও 
পেয়েছি কিছু বিমূর্ত সংবাদ, 
প্রক্ষিপ্ত ভাষার সাথে 
এইসব তামাদি সভ্যতা শুয়ে আছে 
ডিমডিমে আলোমেখে লেখার টেবিলে, 
              
                     আমিও উপুড় হয়ে পদাবলী পড়ি 
আর, দাবার চালের মতো সতর্কে ভুল করি বারবার, 
তোমার ভিতরে কিছু আলো ছিলো ভেবে 
হেঁটে গেছি দণ্ডিপাক মেনে, 
কিছু কিছু দেবদারু তবু 
উর্ধবাহুসম্ভূত ঠিকানাএঁকেছে ওই 
                           স্বর্গের দিকে.... 

এইসব দেশে কেউ বাড়ির সামনে যেন 
                          ঠিকানা লেখে না কক্ষনো

No comments

Powered by Blogger.